বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৬ পূর্বাহ্ন
এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক:
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের অধীনে আপনি দু’ভাবে জামিন চাইতে পারেন। এ আইনের ১৯ ধারায় ট্রাইব্যুনালের কাছে জামিন আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে ঘটনার সত্যতা নিয়ে সন্দেহ থাকলে জামিন দিতে পারেন। আর যদি জামিন না দেয়, তাহলে ২৮ ধারায় উক্ত জামিন না দেয়ার আদেশের বিরুদ্ধে মহামান্য হাইকোর্টে ৬০ দিনের মধ্যে আপীল দায়ের করতে পারেন। এ দু’ধরনের জামিন ছাড়াও অন্য এক ধরনের জামিনের বিধান আছে যা হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক উদ্ভাবিত আগাম জামিন। এ জামিনটা হচ্ছে যখন কোনো ব্যক্তির গ্রেফতার হওয়ার সম্ভাবনায় বা গ্রেপ্তার হওয়ার অনুমানে কোনো ব্যক্তিকে জামিন দেওয়া হয়, তখন তাকে আগাম জামিন বলে। অভিযুক্ত ব্যক্তি গ্রেফতারের আগেই আদালত থেকে এ জামিন নিতে পারেন।
যখন কোনো ব্যক্তির নিকট বিশ্বাস করার এমন কারণ থাকে যে, তিনি কোনো জামিন অযোগ্য অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার হতে পারেন, তখন তিনি হাইকোর্ট বিভাগে আবেদন করলে আদালত যদি যথাযথ মনে করেন তাহলে ওই মুহূর্তে উক্ত ব্যক্তিকে ভবিষ্যতে গ্রেপ্তার করা থেকে বিরত রাখার জন্য আগাম জামিনের নির্দেশ দেবেন।
এরপর রয়েছে অন্তবর্তীকালীন জামিন। কোনো ব্যক্তি পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর মামলা নিষ্পত্তির আগ পর্যন্ত কারাগার থেকে বের হতে হলে তাঁকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৮ ধারা অনুযায়ী আদালত থেকে অন্তবর্তীকালীন জামিন নিতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে জামিনের জন্য কতগুলো ধাপ অতিক্রম করতে হয়। প্রথমে তাঁকে গ্রেফতার হওয়ার পর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে আইনজীবীর মাধ্যমে তাঁকে জামিন আবেদন করতে হয়। জামিন না-মঞ্জুর হলে দায়রা জজ আদালতে আসতে হয়। সেখানেও জামিন না-মঞ্জুর হলে হাইকোর্টে জামিন আবেদন করতে হয়। হাইকোর্টে জামিন না-মঞ্জুর হলে সর্বশেষ ভরসা আপিল বিভাগের রায়ের জন্য অপেক্ষা করতে হয়।
এর প্রতিটি ধাপের যে কোনো একটি আদালতে জামিন হলে তিনি কারাগার থেকে বের হতে পারবেন। যদি না এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ বা বিরোধী পক্ষ আপিল না করে। ফৌজদারি বিচারের ক্ষেত্রে মূলনীতি হলো সাক্ষী প্রমাণ দ্বারা আসামী দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত আসামীকে নির্দোষ ধরে নিতে হবে। কোনো ফৌজদারী মামলার ঘটনা বা পারিপার্শ্বিক অবস্থা যদি কোনো ধরণের সন্দেহের সৃষ্টি করে তাহলে আইনানুযায়ী সেই সন্দেহের সকল সুবিধা আসামীপক্ষ পেতে হকদার।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১৯(৩) উপ-ধারায় বিধানে বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি নারী বা শিশু হলে কিংবা শারিরীকভাবে অসুস্থ হলে সেক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তিকে জামিনে মুক্তি দিলে ন্যায়বিচার ব্যহত হবে না মর্মে ট্রাইব্যুনাল সন্তুষ্ট হলে তাকে জামিনে মুক্তি দিতে পারবে। আর তালাকের পর স্ত্রী নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতে মিথ্যা মামলা করলে এ বক্তব্যের সমর্থনে বিজ্ঞ আদালতের সামনে ফিরিস্তি আকারে তালাক প্রদানের নোটিশ, ডাক রশিদ, প্রাপ্তি স্বীকারসহ উপযুক্ত প্রমাণ পেশ করুন।
মাননীয় আদালত সার্বিক দিক বিবেচনা করে এবং তালাকের পর মামলা সম্পর্কিত উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তের উপর ভিত্তি করে আসামীকে জামিনে মুক্তির আদেশ দিয়ে থাকেন। মহামান্য হাইকোর্ট পর্যবেক্ষণে বলছেন, বিবাহ বিচ্ছেদ আগে হয়েছে। কাজেই কজ অব এ্যাকশনের দিনে ভিকটিমকে তার স্বামীর বাড়িতে থাকার কথা নয়। যা ১২ এডিসি, পৃষ্ঠা-৯৬ এবং ৬ এএলআর (এডি), ভলিউম-২, পৃষ্ঠা-৯০ এ রিপোর্টেড হয়েছে।
লেখকঃ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও আইন গবেষক। ইমেইলঃ seraj.pramanik@gmail.com, মোবাইলঃ ০১৭১৬৮৫৬৭২৮